বেলি ফুল

Image
  বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ বাংলদেশে বেলি ফুলের কদর যেন সর্বত্র। এর মন মাতানো ম ম গন্ধে প্রেমিক হৃদয়ে ফেলে দারুণ সাড়া। বাংলার ক্ল্যাসিক্যাল প্রেমের গল্পে নায়িকার খোপায় বেলি ফুলের মালা গুজে না দেওয়া প্রেমিক যেন বিরল।  সাদা রঙের তীব্র সুগন্ধযুক্ত, মালা গাঁথার উপযোগী বিশেষ এই ফুল বাংলাদেশের ঘরে ঘরে সুপরিচিত।   অর্থকরী ফুলের দিক দিয়ে বেলির স্থান এখনও শীর্ষে। বেলি বা বেলী যেভাবেই লিখি না কেন, এর ইংরেজি নাম কিন্তু    Arabian j asmine । আর বৈজ্ঞানিক নাম হল  Jasminum sambac.  জেসমিন গণের বিশেষ এই সুগন্ধী ফুলটির গাছের উচ্চতা প্রায় এক মিটার পর্যন্ত হয়ে থেকে। ক্ষেত্রবিশেষে হয়ত একটু বাড়তিও হয়। ফাল্গুন থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত বেলি ফুল ফোটে। বর্ষাকালেও থাকে। বেলি ফুল মূলত সন্ধ্যায় ফোটে এবং পরদিন দুপুরে ঝরে যায়। বাগানে ও টবে চাষ করা যায় । কলম ও শিকড় থেকে চারা তৈরি করা যায়। শীতকালে গাছ ছেঁটে দিতে হয় । এদের কচি ডাল রোমশ প্রকৃতির হয়। ব্যবহার বেলি ফুল আলংকরিক হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। ফুলের তোড়া ও মালা বানাতে এই ফুলের অধিক ব্যবহার হয়। এছাড়াও বেলিফুলের সুন্দর ঘ্রাণের জন্যে এটি সুগন্ধী তৈরিতে ব্যবহৃত

গাঁদা ফুল চাষ


 

শীতে গাঁদা ফুলের চাষ

শীতকালের ফুলের মধ্যে গাঁদা অন্যতম। বিবাহ, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, গৃহসজ্জা, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও শহীদ দিবসসহ সব অনুষ্ঠানেই গাঁদা ফুলের বিকল্প নেই। কেটে যাওয়া ত্বকের রক্ত পড়া বন্ধ করতে, কাটা ঘা শুকাতে ও জীবাণুনাশক হিসাবে গাঁদা পাতার রস খুব উপকারী।

 

জাতঃ

চাইনিজ , রাজগাঁদা, আফ্রিকান ও ফরাসি জাতের গাঁদা আমাদের দেশে বেশি চাষ হয়। রঙ ভেদে গাঁদার জাত হচ্ছে হলুদ, লাল, কমলা, গাঢ় খয়েরি, লাল হলুদের মিশ্রণ ইত্যাদি। আফ্রিকান জাতের গাছ সোজা ও লম্বা, ৩০-১০০ সেমি লম্বা হয়। ফুল কমলা, হলুদ ও গাঢ় খয়েরি রঙের ছিটা দাগযুক্ত হয়। ফরাসি গাঁদার গাছ খাট ও ঝোপালো, ১৫-৩০ সেমি লম্বা হয়। ফুল আকারে ছোট,  প্রচুর ধরে ও রঙ লাল। কমলা সুন্দরীর গাছ খুব শক্ত। ফুল গাঢ় কমলা। শাখা প্রশাখা বেশি হওয়ায় ফুল বেশি ধরে। ফুলের আকার ৪.৫ থেকে ৫ সেমি। অনেক দিন পর্যন্ত ফুল ধরে। প্রতি গাছে ৫৫-৬০ টি ফুল পাওয়া যায়। রোগ সহনশীল।

 

চারা তৈরিঃ

শাখা কলম ও বীজের মাধ্যমে গাঁদা ফুলের চারা তৈরি করা যায়। নভেম্বরে বীজতলায় বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করতে হয়। সারা বছর চাষ করা গেলেও শীতকালে ফলন ভাল হয়। শাখা দিয়ে কলম করার জন্য গাঁদা গাছের শাখা ৮-১০ সেমি লম্বা করে কাটতে হবে। বীজতলায় শাখা ডালের টুকরাগুলো দু একটি পর্বসহ রোপন করতে হবে। উপযুক্ত সময় হচ্ছে মার্চ মাস। নিয়মিত সেচ দিয়ে বীজতলা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ২০-২৫ দিনের মধ্যে পাতা গজায়।

 

জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ

উঁচু, সুনিষ্কাশিত দো আঁশ ও উর্বর মাটি গাঁদা চাষের উপযোগী। চার পাঁচবার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হবে। টবে বা পাত্রে চাষ করলে তিন ভাগ দো আঁশ এঁটেল বা দো আঁশ মাটির সাথে একভাগ গোবর মিশিয়ে সার মাটির মিশ্রন তৈরি করতে হবে। এই সার মাটি টবে বা পাত্রে বা পলিব্যাগে ভরতে হবে।

 

সার প্রয়োগঃ

প্রতি শতক জমিতে পঁচা গোবর, ৪০ কেজি ইউরিয়া ২ কেজি, টিএসপি ৩ কেজি এবং এমওপি ২ কেজি সার প্রয়োজন । এ সারগুলো মাটির সাথে মিশাতে হবে।

 

চারা রোপনঃ

বীজ থেকে অথবা শাখা থেকে তৈরি একমাস বয়সের চারা রোপন করতে হয়। ডিসেম্বর মাসে চারা রোপন করতে হয় । সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০-৫০ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত ৩০-৪০ সেমি হওয়া উচিত। চারা উৎপাদন না করে সরাসরি বীজ থেকেও গাঁদা চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে প্রতি শতকে ৫-৬ গ্রাম বীজ জমিতে বপন করতে হবে।

 

পরিচর্যাঃ

মাটি শুকনোর আগেই সেচ দিতে হয়। গাছের গোড়াই পানি জমলে  নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। আগাছা জন্মালেই নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। গাঁদা ফুলে রোগ বালাই তেমন হয়না। তবে জাব পোকা আক্রমণ করলে ২ মিলি ম্যালাথিয়ন ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। গাছ বড় হলে খুটির সাথে বেধে দিলে গাছ  সোজা থাকে। এতে ফুলের গুনগত মান ভাল হয়। গাছে ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য ফুল আসার একমাস আগে গাছের ডগা ভেঙে দিতে হবে। একটি শাখায় ঘন হয়ে অনেকগুলো ফুল বা কুঁড়ি ধরলে উপরের একটি বা দুইটি রেখে বাকিগুলো ভেঙ্গে দিতে হবে যাতে ফুল বড় হয়। চারা রোপনের ১৫ দিন পর প্রতি শতাংশে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করা যেতে পারে। চারা মারা গেলে সেখানে চারা রোপন করা উচিত। চারা ঘন হলেও পাতলা করতে হবে।

 

ফুল সংগ্রহ ও ফলনঃ

ফুল কাঁচি বা ব্লেড দিয়ে বোটাসহ কেটে সংগ্রহ করতে হবে। খুব ভোরে ফুল তুলতে হয়। চারা রোপনের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে ফুল সংগ্রহ করা যায়। গড়ে একটি গাছে জাত ভেদে ১৫-৪০ টি ফুল ধরে।

Comments

Popular posts from this blog

চন্দ্রমল্লিকা চাষ

বেলি ফুল